Connect with us

সৃজন মিউজিক

গান আত্মার কথা বলে

Published

on

সাক্ষাৎকারঃ ইমরান হোসেন, সৃজন মিউজিক প্রতিবেদক

‘গান আত্মার কথা বলে। গান গাওয়ার আগে আত্মার সাথে কথা বলতে হবে। আত্মার সাথে সম্পর্ক যদি না থাকে তাহলে সেটা গানই হল না। তাই আত্মার সাথে সম্পর্ক আগে। আত্মা যদি সন্তুষ্ট হয়, তারপর গান।’ কথাগুলো আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া বাঁশিবাদক ও কণ্ঠশিল্পী বারী সিদ্দিকীর।

সম্প্রতি সৃজন মিউজিকের মুখোমুখি হয়েছেন এ জীবন্ত কিংবদন্তি। ওই আলাপচারিতায় ওঠে এসেছে বারী সিদ্দিকীর সঙ্গীত জীবনের নানা দিক ও সমসাময়িক সঙ্গীত প্রসঙ্গ। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হল—

কেমন আছেন? কিডনির সমস্যা কি কমেছে?
ভাল আছি, সমস্যাটা আছে। ডায়ালাইসিস করিয়েছি। এর মধ্যে নিজের কাজকর্মও করে চলেছি।

আপনার সঙ্গীত সাধনা থেমে নেই। ১২ বছর বয়স থেকে গান করে চলেছেন। শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
শৈশবে গান বাজনা করেছি পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে। পরিবারেরই গান বাজনা ছিল অল্পস্বল্প। সেই সুবাদে আমিও একটু একটু গান করতাম। বলতে পারেন আমার গানের জন্য আমার অঞ্চলও কিছুটা দায়ী। নেত্রকোণায় গানের আসর হত অনেক। চার-পাঁচ বছর বয়স থেকে দেখছি। ওখানে প্রতিটি পরিবারেই গান বাজনা হত। এই আবহাওয়াটাই গায়ে লেগেছে।

সেই সময় কাদের গান শোনা হত বেশি?
নেত্রকোণায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের চর্চা ছিল। কলকাতা থেকেও লোকজন আসতেন, গান করতেন। যেমন ছিল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের চর্চা, তেমন ছিল ফোক, মুর্শিদী ও বাউল গান। উচ্চাঙ্গের চর্চা বেশি থাকার কারণ হল গৌরিপুরের রাজবাড়িতে ভারত থেকে শিল্পী আসতেন। তারা নেত্রকোণাতেও যেতেন। সেই সুবাদেই সঙ্গীতের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে চর্চা হত। এছাড়া নেত্রকোণা সুফিবাদের জায়গা, বাউলের দেশ।

গানকে পেশা হিসেবে বেছে নিলেন কখন?
গান আমার পেশা হবে কখনই ভাবিনি। এমনিতেই গান গাইতাম, বাঁশি বাজাতাম। ধরতে গেলে এটা আমার রক্তের মধ্যেই ছিল। আমার নানা শেখ সাবিরও পেশাদার বাদক ছিলেন। গান গাইতেন আমার ভাই-বোনরাও।

কলেজ জীবনে এসে মনে হল গান ভালভাবে শিখতে হবে। বিভিন্ন ওস্তাদের কাছে শিখেছি, পরে ভারতের পুনেতে গিয়েও ওস্তাদের কাছে শিখেছি। আমি মুলত বাদক ছিলাম। বাংলাদেশে বাইরেও ইউরোপ-আমেরিকাতে বিভিন্ন কনফারেন্সে বাঁশি বাজাতে গিয়েছি। গানে এসে এখন আর ওইভাবে বাঁশি বাজানো হয় না। শুধু নিজের গানে বাজাই।

১৯৯৫ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমার গান গেয়ে শিল্পী হিসেবে আপনার ব্যাপক জনপ্রিয়তা আসে?
আশির দশকেই আমি শিল্পী হিসেবে এসেছি। আগে ২০ বছর ধরে গান শিখেছি। হুমায়ূন আহমেদের সিনেমাতে গান করার পরে গানগুলো সর্বস্তরে ছড়িয়ে যায়। বাঁশি বাদক হিসেবে আমার যে জনপ্রিতা ছিল তার চেয়ে শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হই। তবে সঙ্গীত বোদ্ধারা আমাকে জানতেন-চিনতেন অনেক আগে থেকেই। এটা ঠিক, গণহারে আমার পরিচিতি আসে গান গেয়েই।

এরপর আপনার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। অনেক অ্যালবামেই গান করছেন। অনেক দিন আপনার কোনো নতুন একক অ্যালবাম আসেনি।
একক অ্যালবাম করা হয়নি অনেকদিন, তবে মিশ্র অ্যালবামগুলোতে গাইছি। বরাবরই আমি এমন ছিলাম। একক অ্যালবাম করতে হবে, অনেক সুনাম অর্জন করতে হবে এমন চিন্তা ছিল না। এক কথায় আমার মেজাজ মত কোনো কিছু না হলে আমি করতে রাজি না।

শুধু তো অ্যালবাম করছেন না— এমন না। বেশ কিছুদিন ধরে নিজেকে আড়ালেই রাখছেন!
না, ঠিক তা নয়। বলতে পারেন সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ কম। একেকজনের একেকটা ঘাটতি থাকে। আমারও আছে। আমি কী খাই-না খাই, কী কাপড় পরি, আমার রাতে কেমন ঘুম হয়? এগুলো পত্রিকাতে প্রকাশ করার বিষয় না। এই সব মিডিয়াতে প্রকাশিত হোক আমি কখনই চাই না। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। অর্থবহ কোনো জিনিসই মিডিয়াতে যাওয়া উচিত বলে মনে করি। গানের ক্ষেত্রেও একটা গান প্রকাশিত হলে সেটা অর্থবহ হওয়া উচিত। মানুষ যেন গান শুনে উপকৃত হয় তার জন্য আমার গান করা।

আপনি বরাবরই ফোক গান করে আসছেন। বেশির ভাগ গানে আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া পাওয়া যায়। এটা কেন?
সব গানই আত্মিক, গান গাওয়ার আগে আত্মার সাথে কথা বলতে হবে। আত্মার সাথে সম্পর্ক যদি না থাকে তাহলে সেটা গানই হল না। তাই আত্মার সাথে সম্পর্ক আগে। আত্মা যদি সন্তুষ্ট হয়, তারপর গান। গানটা কি সামাজিক জীবন নিয়ে, না আল্লাহ কে পাওয়ার জন্যে, না প্রেমিকাকে পাওয়ার জন্যে? আমরা বলি আধ্যাত্মিক গান— এর আগে একটা শব্দ থাকা উচিত। ‘আত্মার গান’। আত্মা সন্তুষ্ট হওয়ার পরেই ওইটাতে আধ্যাত্মিকতা থাকতে পারে।

আমার গানে যে শুধু আধ্যাত্মিকতা আছে সেটা আমি বিশ্বাস করি না। আমার গানে প্রেম আছে, সমাজ আছে।

আপনার গানের মগ্নতা শ্রোতাদের মাঝেও সংক্রমিত হয়। গান গাওয়ার সময় গানের ভেতরে হারিয়ে যান। এটা কিভাবে হয়?
গানের সঙ্গে একাত্মের জন্য এটা হয়। আমি মনে করি গানের সঙ্গে না মিশলে গানের মর্মার্থ প্রকাশ করা যায় না।

আরেকটা বিষয় যোগ করি— আমি এই পর্যন্ত হারমোনিয়াম ধরে গান গাই না। কারণ হারমোনিয়াম বাজালে আবেগের একটা অংশ বাজনার দিকে চলে যাবে। এটা অন্য শিল্পীদের বেলায় হবে কি না আমি জানি না। গাওয়ার সময় গানের একেকটা শব্দের ভেতর প্রবেশ করতে হয়। আমার প্রতিটা গানে যেন আমার নিজের জীবনেরই মর্ম বেদনা প্রকাশ পায়। যতটুকু প্রকাশ পাওয়া দরকার ততটুকু যদি প্রকাশ না পায় তাহলে সেটা ভাল লাগবে না। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করি।

Advertisement
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Dhaka Attack Unreleased Song

Advertisement
কাজী শুভর গানে কলকাতার পল্লবী কর ও প্রেম কাজী
সৃজন মিউজিক3 years ago

কাজী শুভর গানে কলকাতার পল্লবী কর ও প্রেম কাজী (ভিডিও)

Praner Giutar
নতুন গান4 years ago

ভালোবাসা দিবসে দুই বাংলার মিশ্রণে ‘প্রাণের গীটার’

প্রাণের গীটার
নতুন গান4 years ago

মাহফুজ ইমরানের‌ এক বছরের সাধনার ফসল ‘প্রাণের গীটার’ (ভিডিও)

কণ্ঠশিল্পী শাহজাহান শুভ
সৃজন মিউজিক5 years ago

শাহজাহান শুভ’র ‘কথামালা’ গান অন্তর্জালে

ওমরসানী, শাকিব খান ও জায়েদ খান
বিনোদন5 years ago

শাকিব খানের কাছে ক্ষমা চাইলেন জায়েদ খান

নতুন গান5 years ago

রোহিঙ্গাদের নিয়ে গান গাইলো অবস্‌কিওর

সৃজন মিউজিক5 years ago

প্রকাশ হলো ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির অরিজিত সিংয়ের সেই গান

ব্যান্ড সঙ্গীত5 years ago

শাকিরার নতুন মিউজিক ভিডিও ‘পেরো ফিয়েল’

মিউজিক ভিডিও5 years ago

তানজীব সারোয়ারের নতুন গান

মিউজিক ভিডিও5 years ago

ইউটিউবে কুমার বিশ্বজিতের নতুন গান ‘জোছনার বর্ষণে’

Trending