মাসুম আলী সলিল চৌধুরীতাঁর বাবা শচীন দেব বর্মণ। বাবাকে বড় সাহেব ডাকলে, ছেলেকে ডাকা হতো ছোট সাহেব। রাহুল দেব বর্মণ যখন বালক, তখন বাবা বিখ্যাত সংগীতব্যক্তিত্ব। কত কত গান তার সুরে বিখ্যাত হয়েছে। অথচ অনেকে জেনে অবাক হবেন, ছোট সাহেব কিনা গুরু মানতেন ওই সময়ে আরেক বিখ্যাত সুরকার সলিল চৌধুরীকে। আজ রাহুল দেব বর্মণের জন্মদিন। ১৯৩৯ সালের এই দিনে বিখ্যাত গায়ক শচীন দেববর্মন এবং মীরার ঘরে কলকাতায় এই সংগীতজ্ঞ জন্মগ্রহণ করেন। নাম রাহুল দেব বর্মণ হলেও বলিউডে তিনি সবার প্রিয় পঞ্চমদা। ডিসকো ও জ্যাজের সমন্বয়ে বলিউডে তিনি এক নতুন ধারার সংগীত প্রচলন করেন। রাহুল দেব বর্মণ মানে তো শুধু দেশের একজন সুরকার নন। তিনি তো শুধু একজন গায়কও নন। তিনি শুধুই চলচ্চিত্রজগতের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি শুধু নন। রাহুল দেব বর্মণ মানে তো সুরের সাগর। তিনি যে কতকিছু—তার ব্যাখ্যা দিতে জায়গা লাগবে বিস্তর। অনেকের হয়তো জানাও আছে তা। বরং, আজ জন্মদিনে রাহুল দেব বর্মণকে নিয়ে কিছু জিনিস জেনে নিন, যেগুলো হয়তো আপনার অজানা।
১) একটা কথা হয়তো অনেকই জানেন যে, রাহুল দেব বর্মণের ডাকনাম পঞ্চম। কিন্তু সে ডাক নাম তো বেশ কয়েক বছর পরে হয়েছিল। তাঁর প্রথম ডাক নাম ছিল ‘টুবলু’। এই ডাকনামটা দিয়েছিলেন তাঁর দাদি। ২) তখন তাঁর বয়স মাত্র ৯! ওই বয়সে আর ডি বর্মণ প্রথম যে গানটায় সুর করেছিলেন, সেটি হল, ‘অ্যায় মেরি টোপি পলটকে আ’। এই গানটি পরে তাঁর বাবা শচীন দেব বর্মণ ব্যবহার করেছিলেন ১৯৫৬ সালের ‘মিস্টার ফান্টুস’ ছবিতে। ৩) মুম্বাইতে রাহুল দেব বর্মণ সরোদ বাজানো শিখেছিলেন উস্তাদ আলী আকবর খানের কাছে। তবলা বাজানো শিখেছিলেন সমতা প্রসাদের কাছে। এ ছাড়া তিনি খুব ভালো মাউথ অর্গান বাজাতে পারতেন। প্রকাশ্যে অনেকবার দেখাও গেছে মাউথ অর্গান বাজাতে। লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলালের ‘দোস্তি’ ছবির জন্য তিনি নিজে মাউথ অর্গান বাজিয়েছিলেন। হেমন্ত কুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘হ্যায় আপনা দিল তো আওয়ারা’ গানেও মাউথ অর্গান বাজিয়েছিলেন তিনি। ৪) রাহুল দেব বর্মণ এককভাবে প্রথম কোনো চলচ্চিত্রের সুর দেন ১৯৬১ সালে। মেহমুদের ফিল্ম ‘ছোটে নবাব’-এ। মেহমুদ এই ছবিটা তৈরি করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন এই ফিল্মের সুর করুন শচীন কর্তা। কিন্তু শচীন দেব বর্মণ জানিয়ে দেন যে, তাঁর হাতে ফ্রি ডেট একেবারে নেই। সেই সময় রাহুল দেব বর্মণকে তবলা বাজাতে দেখেন মেহমুদ। এবং নিজের ছবির জন্য সুরকার হিসেবে সই করান রাহুল দেব বর্মণকে। ৫) এটা সবারই জানা, রাহুল দেব আশা ভোসলের স্বামী। রাহুল দেব বর্মণ প্রথমবার বিয়ে করেছিলেন ১৯৬৬ সালে রীতাকে। দুজনের দেখা হয় দার্জিলিঙে। বেশ কিছুদিন সংসার করার পর ১৯৭১-এ হয় বিবাহ বিচ্ছেদ। শোনা যায় ওই বিচ্ছেদের সময়ই হোটেলের এক ঘরে বসে রাহুল দেব বর্মণ সুর করেছিলেন সেই বিখ্যাত গান ‘মুসাফির হু ইয়ারো’! ৬) রাহুল দেব বর্মণ তাঁর গোটা জীবনে মোট ৩৩১টি ছবিতে গানের সুর দিয়েছেন। এর মধ্যে ২৯২টিই হিন্দি ছবি। সুরকার হিসেবে ৩১টি বাংলা ছবিতে কাজ করেছেন। তিনটি তেলেগু ছবিতে। দুটো করে তামিল এবং উড়িয়া ছবিতে এবং একটি মারাঠি ছবিতে সুরকার হিসেবে কাজ করেছিলেন সুরের জাদুকর। ৭) শুধু সংগীত পরিচালনা নয়; অভিনয়ও করেছিলেন আর ডি বর্মন। মেহমুদের ‘ভূত বাংলা’ ছবি দিয়ে তিনি অভিষেক করেন। তারপর ‘পেয়ার কা মৌসম’-এ অভিনয় করেছিলেন তিনি। ৮)‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে যো দিলকো’ গানটিতে তিনি কাঁচের গ্লাসে চামচ দিয়ে বাজিয়ে শব্দ তুলেছিলেন। কিতাবের গান ‘মাস্টারজি কি‘আ গয়ি চিঠঠি’তে তিনি ক্লাসরুম থেকে কয়েকটি ডেস্ক আনিয়েছিলেন। রেকর্ডিংয়ের সময় সেগুলো ব্যবহার করেছিলেন তিনি। বৃষ্টির ফোঁটার শব্দের জন্য তিনি সারা রাত নিজের ব্যালকনিতে বসে থাকতেন। প্রাকৃতিক সেই শব্দ রেকর্ড করতেন। তারপর তা ব্যবহার করতেন। ‘খুশবু’ ছবির ‘ও মাঝি রে’ গানে তিনি পানিভর্তি বোতল ব্যবহার করেছিলেন। বিভিন্ন লেভেলে সেখান থেকে শব্দ তুলেছিলেন তিনি। বোতলে ফুঁ দিয়ে হলো সাউন্ড তৈরি করেছিলেন। তাঁর সেই সাউন্ড এফেক্টগুলো অর্কেস্ট্রার সঙ্গে ব্যবহার করা হয়। –প্রথম আলো থেকে
