Connect with us

সাক্ষাৎকার

‘মেলোডি কুইন’ মধুরা

Published

on

কলকাতায় এই প্রজন্মের জনপ্রিয় শিল্পীদের তালিকায় যার নাম প্রথমেই আসে তিনি হলেন মধুরা ভট্টাচার্য। টালিউডের ৪০টির মতো সিনেমায় যিনি প্লেব্যাক করেছেন। আর স্টার জলসা, জিবাংলাসহ ভারতীয় বেশকয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত ৫৫টি সিরিয়ালের টাইটেল সং তার গাওয়া। স্টার জলসার ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’ সিরিয়ালের সূচনা সঙ্গীত ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’ মধুরার গাওয়া। যে গানটি বাংলাদেশের শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের অনেকের মুখে মুখে শোনা যায়। এই এক গান মধুরাকে লাখো-কোটি শ্রোতার প্রিয় শিল্পীর তালিকায় স্থান করে দিয়েছে। এছাড়া ‘চোখের তারা তুই’ ‘টাপুর টুপুর’ কানামাছি, সেদিন দু’জনে, রাগ অনুরাগে, কিরণমালা, গোয়েন্দা গিন্নি, মাসহ আরও বেশকিছু জনপ্রিয় সিরিয়ালে টাইটেল সং তার গাওয়া। বাংলাদেশের টিভি সিরিয়ালেও মধুরা সূচনা সঙ্গীত গেয়েছেন। মিষ্টি কণ্ঠের এই শিল্পীকে কেউ কেউ ‘মেলোডি কুইন’ হিসেবেই সাম্প্রতিক সময়ে আখ্যা দিচ্ছেন। কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিউজিকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এই গুনী শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে সাক্ষাতকার তৈরি করেছেন সঙ্গীতের ওপর বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন নিউজপোর্টাল সৃজন মিউজিক বিডির সম্পাদক শাহজাহান আকন্দ শুভ   
সঙ্গীতের জার্নি সম্পর্কে মধুরা ভট্টাচার্য বলেন, প্রথমত বাংলাদেশের সকল শ্রোতা-দর্শকদের জানাই সালাম ও নমস্কার। আমি যেদিন থেকে কথা বলতে শিখেছি; সেদিন থেকেই আধো আধো কথায় গান করতাম। আমার মা রেওয়াজে বসলে হারমোনিয়াম বা তবলাকে আমার চেয়ার বানাতাম বলে বড় হয়ে মায়ের মুখে শুনেছি। বলতে পারেন শৈশব থেকেই এভাবেই সঙ্গীতের তাল লয় ধীরে ধীরে আমার মনের গহীনে বাসা বাধতে থাকে। জ্ঞান হওয়ার পর গানের সঙ্গে এক ধরনের প্রেম তৈরি হয়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই প্রেমও গভীর হতে থাকে। তবে প্রফেশনালি গান করা শুরু করি ২০০৫ সালের নভেম্বর মাস থেকে। তখন আমি অনেক ছোট। পরিচালক দেবাংশু সেনগুপ্ত (প্রয়াত) তার একটি টিভি সিরিয়ালে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেন। সেই থেকে আমার পথচলা শুরু হয়। যে পথপরিক্রমায় আজকের আমি তৈরি হয়েছি।

MADHURA--1সঙ্গীতে আমার প্রথম গুরু অবশ্যই আমার মা শম্পা ভট্টাচার্য। যিনি আমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। কথা বলতে শিখিয়েছেন। আমার মা আকাশ বাণীর ট্রাডিশনাল শিল্পী। এখনও কোনও সুর তাল লয়ে ভুল করলে আমার মা ধরিয়ে দেন। এছাড়া সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোর সূত্রে অনেক গুনীজনের সান্নিধ্যে এসেছি। এখন কাসিক্যাল এবং ভয়েস ট্রেনিং নিচ্ছি শ্রী সন্দীপ নাগ দাদার কাছে। তবে কার কার কাছে শিখেছি বলতে গেলে তালিকাটা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বেশ লম্বা। যেমন ইন্দ্রদীপ দাস গুপ্ত, কবি শ্রীজাতো বন্দোপাধ্যায়ের কাছ থেকে অনেক গাইডেন্স পাই। মধুরা বলেন, সঙ্গীতের কোনও প্রতিযোগিতা থেকে আমি আজকের মধুরা হিসেবে গানের ভূবনে উঠে আসেনি। তবে কিছু প্রতিযোগিতা থেকে আমি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি।
২০০৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় প্রথমবারের মতো ২টি সিনেমার গান রেকর্ড হয়। বিখ্যাত শিল্পী উদিত নারায়ণ এবং বাবুল সুপ্রিয়’র সাথে। গান ২টি প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী অভিনীত মহাকাল সিনেমার জন্য করা হয়। এই দুই গানের সুর করেছিলেন দেবজিৎ রায়। আর গানের কথা লিখেছিলেন প্রিয় চট্টোপাধ্যায়। এ পর্যন্ত ৪০টি সিনেমায় আমি প্লেব্যাক করেছি। আর মুক্তি হয়নি এ রকম সিনেমার সংখ্যা আরও বেশি। বিভিন্ন টিভি সিরিয়ালের টাইটেল সং এবং ব্যাক গ্রাউন্ড সং করেছি এ পর্যন্ত ৫৫টি।

maxresdefaultমধুরার বাবা তুষার কান্তি ভট্টাচার্য পেশায় জেলা জজ ছিলেন। এই সুবাদে তার বাবাকে চাকরিসূত্রে পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে হয়েছে। সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য মা শম্পা ভট্টাচার্য থাকতেন কলকাতাতেই। মধুরা বলেন, স্কুল ছুটি হলে আমি আর আমার দিদি যেতাম বাবার কর্মস্তলে। বাবার কাছেই ক’দিন আমরা থাকতাম। তারপর ছুটি কাটিয়ে আবার চলে আসতাম। বেশ অনেক বছরই আমাদের এভাবে থাকতে হয়েছে। বাবা-মা দু’জনই আমাদের জন্য অনেক সেকরিফাইস করেছেন। এখনও করেন। আমার বাবার আর একটা পরিচয় আছে, তাহলো তিনি লেখক। কলকাতার বেশকিছু পত্র-পত্রিকায় তার অনেক গল্প-উপন্যাস প্রকাশ হয়েছে।

https://www.youtube.com/watch?v=2djEZAtmZdY

মধুরা ভট্টাচার্য ২০১৩ সালে সঙ্গীতের ওপর মাস্টার্স শেষ করেন। এ প্রসঙ্গে মধুরা বলেন, দশম শ্রেণি থেকে মাস্টার্স অবধি ৮ বছর পড়াশোনার পাশাপাশি প্রফেশনালি গান-বাজনা সমানতরালভাবে চলতে থাকে। এই কৃতিত্ব আমার পরিবারের। কারণ তাদের গাইডেন্স ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না। উনারা আমাকে কখনও একাডেমিক ক্যারিয়ারের  জন্য জোর করেননি। শুধু বলতেন পড়াশোনা শেষ করতে হবে। তাই কোন চাপ অনুভব করতাম না। এতেই হয়তো আমি গ্রাজুয়েশন এবং মাস্টার্সে প্রথম শ্রেনিতে প্রথম হতে পেরেছিলাম।

13331131_1043713135714178_3143135481603716197_nনিজের পছন্দের গানের ধরণ সম্পর্কে মধুরা বলেন, মেলোডি ঢঙের গান আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দের। যে গান মন ছুয়ে যায়। সে ধরনের গান শুনতে ও গাইতে ভাল লাগে। বাংলার ট্রাডিশনাল গানতো আছেই। তবে প্লেব্যাকের জন্য বিভিন্ন সিচুয়েশনের গান গাইতে খুব ভালো লাগে। তখন আমি নিজেকে নতুন করে চিনতে পারি। এক প্রশ্নের জবাবে মধুরা ভট্টাচার্য বলেন, তিনি উদিত নারায়ণ, বাবুল সুপ্রিয়, অভিজিৎ ব্যানার্জি, রুপঙ্কর বাগচী, রাঘব চ্যাটার্জি, জাভেদ আলী, অরিজিত সিং, ছাড়াও আরও বেশকিছু গুনীজনের সঙ্গে কলকাতার সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন। বাংলাদেশের অনেক শিল্পীরই গান মধুরার পছন্দের তালিকায় রয়েছে। তবে সৃজন মিউজিকবিডি ডটকমের কাছে তিনি বলেছেন, সাবিনা ইয়াসমীনের গাওয়া ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো’ গানটি তার বিশেষ পছন্দের। এছাড়া রুনা লায়লা, ফিরোজা বেগম, আইয়ুব বাচ্চুর গান খুব ভালো লাগে। আর হালে কনার একটি গান মধুরার পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে। মধুরা বলেন, বাংলাদেশে এখনও অনেক ভালো ভালো গান তৈরি হচ্ছে। যেটা তাকে মোহিত করে।

contentslider

বাংলাদেশের  শ্রোতা সম্পর্কে মধুরা বলেন, আমি গত বছর ৩ বার বাংলাদেশে গেছি। সেখানকার মানুষ খুবই আন্তরিক। বাংলাদেশের মানুষ প্রচণ্ড গান ভালোবাসেন। শোনেন। এরকম ভালো শ্রোতা পৃথিবীর অন্য কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই। বাংলাদেশের সকল শ্রোতাকে আমি প্রণাম জানাই। এখানে অনেক সঙ্গীত বোদ্ধা যেমন আছেন; তেমনি সঙ্গীতপ্রেমীরও অভাব নেই। ফেসবুক টুইটারে তার প্রমাণও পাওয়া যায়। বাংলাদেশের নানা বয়সের বেশকিছু শ্রোতার ম্যাসেজ ও কমেন্ট পাই অহরহ। আরও ভাল লাগে যখন তারা আমার নিজের প্লেব্যাক শুনে নিজের ভালো লাগার কথা জানাই।
মধুরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কিছু কাজ তার কাছে খুব ভাল লেগেছে। প্রাণের বেশকিছু বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। ‘তুমি আছো তাই’ নামে একটি নাটকের টাইটেল সং তার গাওয়া। এটিএন বাংলাতে ‘দিশা’ নামে একটা মেগা সিরিয়ালেও গেয়েছেন। সুজেয় শ্যামের সুরে একটি অ্যালবামেও গান করেছেন। মধুরা বলেন, সুজেয় শ্যামের মতো সুরকারের সঙ্গে কাজ করতে পেরে তার খুব ভালো লাগছে।
বাংলাদেশ সম্পর্কে মধুরা বলেন, আমি মূল্যায়ন করার মতো কেউ নই। তারপরও বলতে হয় বাংলাদেশের মানুষের জন্য আজ বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হয়েছে। পৃথিবীতে এসেই যে ভাষা আমাকে কথা বলতে শিখিয়েছে। যে দেশের মানুষ আমার মায়ের মুখের ভাষার জন্য রক্ত পর্যন্ত দিয়েছে। তারা বাংলাভাষার জন্য গর্ব। বাংলাদেশ সম্পর্কে আমি বলবো,‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’। শুধু একটা বর্ডারের জন্য এই দুটি দেশ আপাত দৃষ্টিতে আলাদা হলেও আমরাতো একই মায়ের সন্তান। তাইতো বলতে হয়, আবার আসিব ফিরে ধান সিড়িটির তীরে, এই বাংলায়;।

Advertisement
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Dhaka Attack Unreleased Song

Advertisement
কাজী শুভর গানে কলকাতার পল্লবী কর ও প্রেম কাজী
সৃজন মিউজিক3 years ago

কাজী শুভর গানে কলকাতার পল্লবী কর ও প্রেম কাজী (ভিডিও)

Praner Giutar
নতুন গান4 years ago

ভালোবাসা দিবসে দুই বাংলার মিশ্রণে ‘প্রাণের গীটার’

প্রাণের গীটার
নতুন গান4 years ago

মাহফুজ ইমরানের‌ এক বছরের সাধনার ফসল ‘প্রাণের গীটার’ (ভিডিও)

কণ্ঠশিল্পী শাহজাহান শুভ
সৃজন মিউজিক4 years ago

শাহজাহান শুভ’র ‘কথামালা’ গান অন্তর্জালে

ওমরসানী, শাকিব খান ও জায়েদ খান
বিনোদন4 years ago

শাকিব খানের কাছে ক্ষমা চাইলেন জায়েদ খান

নতুন গান5 years ago

রোহিঙ্গাদের নিয়ে গান গাইলো অবস্‌কিওর

সৃজন মিউজিক5 years ago

প্রকাশ হলো ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির অরিজিত সিংয়ের সেই গান

ব্যান্ড সঙ্গীত5 years ago

শাকিরার নতুন মিউজিক ভিডিও ‘পেরো ফিয়েল’

মিউজিক ভিডিও5 years ago

তানজীব সারোয়ারের নতুন গান

মিউজিক ভিডিও5 years ago

ইউটিউবে কুমার বিশ্বজিতের নতুন গান ‘জোছনার বর্ষণে’

Trending