শতাব্দীর সেরা বিয়ে মেসি-রোকুজ্জো

সৃজনমিউজিক ডেস্ক :

শৈশবে পরিচয়। সম্পর্ক দুই দশকের। এক ছাদের নিচে প্রায় ১০ বছর। লিওনেল মেসি, আন্তনেলা রোকুজ্জোর ঘর আলো করে ফুটফুটে ছেলেও এসেছে দুটি। এত কিছুর মধ্যে বিয়েটাই করা হয়নি শুধু। সেই আনুষ্ঠানিকতা রাজকীয়ভাবে সারলেন ফুটবলের রাজপুত্র। পরশু জন্মস্থান রোসারিওর হোটেল সিটি সেন্টার ক্যাসিনোতে হয়ে গেল বিয়ের আইনি ও লৌকিক আচার।

রোকুজ্জো পরেছিলেন স্প্যানিশ ডিজাইনার রোসা ক্লারার তৈরি চোখ ধাঁধানো বিয়ের গাউন, যেটা আনা হয়েছে বার্সেলোনা থেকে। হলিউড নায়িকা ও স্পেনের রানির জন্য গাউন বানানো ক্লারার নকশা করা পোশাকে বধূবেশে রাজকন্যাই লাগছিল ২৯ বছর বয়সী রোকুজ্জোকে। সাদা শার্ট আর হালকা ছাই রঙের টাইয়ের সঙ্গে আরমানি নীল স্যুটে মেসিকেও দেখাচ্ছিল রাজপুত্রের মতো।

বিয়েতে নিষিদ্ধ ছিল মোবাইল ফোন, যেন কেউ ছবি তুলে তা ছড়িয়ে দিতে না পারে। প্রায় ২৫০ জন অতিথির জন্য ছিল ব্যক্তিগত বিমানের ব্যবস্থা। ৭০ জন হেয়ারস্টাইলিস্ট, নিরাপত্তার দায়িত্বে ৪৫০ জনের মতো নিরাপত্তাকর্মী! পাঁচ তারা হোটেলের এই বিয়ে নিয়ে এত দিন আর্জেন্টাইন মিডিয়ায় লেখা হচ্ছিল ‘দশকের সেরা বিয়ে’।

গতকাল বিখ্যাত দৈনিক ক্লারিন লিখেছে, ‘শতাব্দীর সেরা বিয়ে’! নারী অতিথিদের বলা হয়েছিল অন্তত তিনটি করে পোশাক নিয়ে আসতে, যেন অন্যদের সঙ্গে মিলে না যায়। একই অনুরোধ করা হয়েছিল ছেলে অতিথিদেরও। যে কারণে মার্তিন ডেমিচেলিসের স্ত্রী প্লেবয় মডেল এভাঞ্জেলিনা নিয়ে এসেছিলেন পাঁচটি পোশাক!

শৈশবে পরিচয় হলেও দুজনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে রোকুজ্জোর এক বন্ধুর ট্র্যাজিক মৃত্যুর পর। খবরটা শুনে স্পেন থেকে রোসারিওতে ছুটে এসেছিলেন মেসি। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রোকুজ্জোর। তখন থেকেই গাঢ় হয়েছিল সম্পর্কটা, যার পরিণতি গত পরশুর বিয়ে। চাঁদে কালো দাগের মতো জাঁকজমক এই বিয়ের খুঁত বলতে নববধূ আর মেসির মা সেলিনা মার্তিনার শীতল সম্পর্কের গুঞ্জন। হোটেলেও নাকি আলাদা ফ্লোরে ছিল দুই পরিবারের সদস্যরা। তবে সামনাসামনি ক্যামেরায় হাসিখুশি দেখা গেছে তাদের।

মেসির রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে তারকারা

মেসির মায়ের সঙ্গে রোকুজ্জোর শীতল সম্পর্কের শুরু ২০১০ বিশ্বকাপ থেকে। মেসির মাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘রোকুজ্জো পৌঁছে গেছে, আপনি কবে দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন?’ জবাবে সেলিনা মার্তিনার বিস্ময়, ‘কে রোকুজ্জো?’ এর পর থেকেই নাকি ভাঙন ধরে দুই পরিবারে। তবে বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা মেসির এক বন্ধু নিশ্চিত করেছেন, ‘পুরোটাই গুজব। দুই পরিবারের সম্পর্ক দারুণ, কোনো সমস্যা নেই। ’

বিয়ের আসরে লাল কার্পেটে সবার আগে সস্ত্রীক পা রাখেন মেসির পুরনো বার্সা সতীর্থ স্যামুয়েল এতো। এরপর সের্হিয়ো আগুয়েরো। লুই সুয়ারেস, জেরার্দ পিকে, সেস্ক ফাব্রেগাসসহ মেসির পুরনো ও বর্তমান সতীর্থদের প্রায় সবাই সবান্ধব হাজির ছিলেন রোসারিওর এই অনুষ্ঠানে। তবে নেইমার এসেছিলেন একা। বান্ধবী ব্রুনোকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও আসতে রাজি হননি তিনি।

আমন্ত্রিত হয়েও নানা কারণে আসতে পারেননি ইনিয়েস্তা, রাকিতিচ, রবের্তো, ভিদালরা। প্রথমে জানা গিয়েছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনার উপস্থিতিতে বর্ণিল হবে এই অনুষ্ঠান। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ম্যারাডোনা আমন্ত্রণই পাননি মেসির বিয়েতে! মেসি-ম্যারাডোনার সম্পর্কটা তিক্ত নয় মোটেও। ২০১০ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার অধীনেই খেলেছেন ফুটবলের রাজপুত্র। সাম্প্রতিক সময়ে দুজনের যোগাযোগ আগের মতো না থাকাতেই হয়তো দাওয়াত করা হয়নি তাঁকে। আর সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় আমন্ত্রণ পাননি বার্সার সদ্য সাবেক হওয়া কোচ লুই এনরিকে।

পপ তারকা শাকিরা গান গেয়েছেন কি না, নিশ্চিত না হলেও উরুগুয়ের নামি গ্রুপ ‘রোম্বাই অ্যান্ড মারামা’ মাতিয়েছে বিয়ের আসর। উরুগুইয়ান তারকা লুই সুয়ারেস এনেছিলেন তাদের। মেসির অনুরোধে এসেছিলেন সের্হিয়ো আগুয়েরোর বান্ধবী কারিনা পারফরম করেছে বিখ্যাত ‘হোয়েনএভার/ হোয়াটএভার’ গানে। রোকুজ্জোকে চমকেও দেন মেসি। কারণ রোকুজ্জোর জানা ছিল না থিম সং গাইবার জন্য মেসি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন বিখ্যাত শিল্পী অ্যাবেল পিন্টোসকে। তিনি গেয়েছেন রোকুজ্জোর প্রিয় গান ‘সিন প্রিন্সিপিও নি ফাইনাল’। গানের পাশাপাশি মোজারেলা পনিরের সঙ্গে মাংস আর মাছ মিশিয়ে পাস্তা, আর্জেন্টিনার স্থানীয় খাবার, যেমন—মাংসের পুর ভরা পিঠা, শস্য আর মাংসের ঘন ঝোল ‘লোর্কো’, স্থানীয় কায়দায় করা গরুর মাংসের রোস্ট—সবই মন ভরিয়েছে অতিথিদের ।

হোটেলে যখন হচ্ছিল রাজকীয় এই বিয়ে, তখন হোটেলের বাইরে বিয়ে করেছেন মেসির মতো দেখতে এক ব্রাজিলিয়ান সমর্থকও! ব্রাজিল থেকে বান্ধবীকে নিয়ে এসেছিলেন সেই ভক্তটি। প্রতিবাদে মুখর ছিল আবার কিছুদিন আগে রোসারিওর পেপসিকো থেকে ছাঁটাই হওয়া ৬০০ কর্মী। অনুষ্ঠান পণ্ড করে বিশ্ব মিডিয়ার নজর কাড়তে চেয়েছিলেন তাঁরা। কড়া নিরাপত্তার জন্য সম্ভব হয়নি সেটা।

বিলাসবহুল এই হোটেলের চারদিক ঘিরে অপরাধের দুনিয়া। কুখ্যাত মাফিয়াচক্র ‘লস মনোস’-এর চালানো সাম্রাজ্যে খুন, রাহাজানি, মাদক সাধারণ ব্যাপার এখানে। আর্জেন্টিনার অন্য শহরের তুলনায় রোসারিওর অপরাধপ্রবণতা কয়েক গুণ বেশি। তার পরও নির্বিঘ্নে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হওয়াটা মেসির জন্য স্বস্তির। ডেইলি মেইল, মার্কা