অন্য মিডিয়া
হৃদয়ে লেখা নাম মান্না দে
Published
6 years agoon

সৃজন মিউজিক ডেস্ক :
দুরুদুরু বুকে শ্রীরাধা এসেছেন মদন ঘোষ লেনে মান্নাদা’র বাড়িতে। বয়স তখন নিতান্তই কম। সবে এমএ পড়ছে। এমন সময় এক অভাবনীয় সুযোগ এসে গেল মান্না দে’র সুরে প্লে-ব্যাক করার। গান লিখেছেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিচালক দীনেন গুপ্ত। ছবির নাম ‘কত ভালবাসা’। স্বভাবতই শ্রীরাধা খুবই উত্তেজিত। মান্নাদা সুরটা শেখাচ্ছেন: ‘চলতে চলতে মন বলছে’। গাইছেন, যত বার গাইছেন, সুর ততই খেলছে। মুগ্ধ হয়ে মান্নাদা’র গাওয়া গান শুনছেন শ্রীরাধা। হঠাৎ সংবিৎ ফিরল মান্নাদা’র। বললেন, ‘‘আরে, তুমি চুপচাপ বসে আছ কেন? আমার সঙ্গে গানটা গাও, নইলে শিখবে কী করে?’’ শ্রীরাধার সঙ্গে কথা হচ্ছিল লেকটাউনের স্টুডিও ফিলিং-এ। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আমি তো মুগ্ধ হয়ে মান্নাদা’র গান শুনছি। কী গায়কি! কী ইম্প্রোভাইজেশন! গান শুনতে শুনতে আমি ভুলেই গিয়েছি যে গানটা আমাকে শিখতে হবে, গাইতে হবে। অসাধারণ শিক্ষক মান্নাদা! খুব যত্ন করে গানটা শেখালেন। শুধু মান্নাদা’র গাওয়া ফলো করলেও অনেক কিছু শেখা যায়।’’
সব দিকে ওঁর নজর। সে দূর্বাদল চট্টোপাধ্যায়ের মিউজিক অ্যারেজমেন্ট হোক বা বাদ্যযন্ত্রীদের মহড়া। সব কিছুর উপরেই মান্নাদা’র সতর্ক দৃষ্টি। উদ্দেশ্য একটাই। গানটাকে ভাল, আরও ভাল করতে হবে। ১৯৯২। রেকর্ডিং হল সল্টলেকের রূপায়ণ-এ। মান্নাদার সুরে শ্রীরাধার সারা জীবনের সম্পদ হয়ে রইল এই গানটি। মান্নাদা’র সুরে এই ছবিতে সুদেব দে’ও গেয়েছিলেন ‘দময়ন্তী, দময়ন্তী’। তিনি এ গানের জন্যই পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ প্লে-ব্যাক সিংগারের পুরস্কার। সুদেব তো প্রকাশ্যেই বলেন, ‘‘এর কৃতিত্ব অনেকটাই কাকার। সুর আর শেখানোর মধ্যেই কাকা আসল কাজটা করে দিয়েছিলেন।’’
https://www.youtube.com/watch?v=6avgCCWOeCU
যে কোনও কাজেই মান্নাদা ছিলেন ১০০ শতাংশ সিরিয়াস। সে গানের ক্ষেত্রে বা দৈনন্দিন জীবনযাপনে। মদন ঘোষ লেনের বাড়িতে সিটিং চলছে। নতুন গানের রেকর্ডিং। যন্ত্রসংগীত পরিচালক প্রয়োজনীয় নোট নিচ্ছেন। মান্নাদা সব কিছু বিশদে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। কোথায় কোন বাদ্যযন্ত্র কী সুরে বাজবে, রিদমের প্যাটার্নটা কেমন হবে, এই সব আর কী। কাজের সময় মান্নাদা কাউকে অ্যালাউ করতেন না। ঘরের দরজা ভেজানো ছিল। এই সময় দরজা ফাক করে একটি মেয়ে মুখ বাড়াল। ‘‘কে, কে, কী ব্যাপার? এভাবে ঢুকে পড়লেন?’’ মেয়েটি থতমত খেয়ে বলল, ‘‘গুঁড়ো সাবান বিক্রি করতে এসেছি, বাড়িতে কোনও মহিলা নেই?’’ মান্নাদা’র মেজাজ তো প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেছে। বললেন, ‘‘না, কেউ নেই! দয়া করে আপনি এখন আসুন।’’ মেয়েটি চলে গেল। মান্নাদা আবার কাজে বসলেন। ও দিকে মেয়েটি তো বাড়ি বাড়ি গুঁড়ো সাবান বিক্রি করার জন্য ঘুরছে। ঘুরতে ঘুরতে অনেক সময় খেয়াল থাকে না, কোন পাড়ায় কা’র বাড়িতে চলে এল। খানিকক্ষণ বাদে কেমন মনে হল— আচ্ছা, যে-ভদ্রলোক গান গাইছিলেন তাঁকে যেন মান্না দে’র মতো মনে হল! সত্যিই মান্না দে নয় তো? তবে যেমন ধমক খেয়েছে, মেয়েটি জানে আবার যদি ওখানে যায় তো কপালে দুর্ভোগ আছে। তবুও কেমন কৌতূহল হয়। মনেহয়, যা হয় হবে। ফলে মেয়েটি আবার ফিরে এসে সটান ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। এ দিকে মেয়েটিকে ফের ফিরে আসতে দেখে মান্নাদা তো খুবই বিরক্ত হলেন। বললেন, ‘‘কী আশ্চর্য আপনি আবার ফিরে এলেন?’’ মেয়েটি অবাক চোখে মান্নাদাকে দেখতে দেখতে শুধু বলল, ‘‘না, কিছু কিনতে হবে না। শুধু বলুন, আপনিই কি মান্না দে?’’ জবাব এল, ‘‘হ্যাঁ আমিই মান্না দে। কিন্তু কী হয়েছে তাতে?’’ মেয়েটি বলল, ‘‘না, কিছু হয়নি। শুধু একটা প্রণাম করব?’’ এই সব ঘটনার কথা বলতে বলতে মান্নাদা’র চোখে জল এসে যেত। বলতেন, ‘‘সামান্যই গাইতে পারি। তার জন্য সবার এত ভালবাসা?’’
জীবনযাপনে মান্নাদা’র দৃষ্টিভঙ্গি সবার দৃষ্টান্ত হতে পারে। মান্নাদা’র মূলমন্ত্র হচ্ছে, সময়ের কাজ সময়ে করো। মান্নাদা শেষ জীবনে থাকতেন বেঙ্গালুরুর কল্যাণনগরে। এখানেই ডা. গণেশ শেঠি এবং তাঁর স্ত্রী ডা. অঞ্জলি শেঠির ডেন্টাল ক্লিনিকের চেম্বার। দুজনেই মান্নাদার গানের অসম্ভব ভক্ত। মান্নাদাও ওঁদের খুব পছন্দ করেন। এই দুই ম্যাঙ্গালোরিয়ান ডাক্তার অনেক বার মান্নাদাকে অনুরোধ করেছেন, ‘‘দাঁতে কোনও সমস্যা হলে জাস্ট একটা ফোন করে দেবেন, আমরাই চলে যাব।’’ আসলে চেম্বারটার খাড়া সিঁড়ি। এই বয়সে মান্নাদা’র উঠতে কষ্ট হয়। কিন্তু কে কার কথা শোনে! মান্নাদা নিজেই তাঁর প্রিয় সাদা অল্টো গাড়ি চালিয়ে চলে আসতেন আর সিঁড়ি বেয়ে উঠতেন চেম্বারে। ডা. শেঠি যথারীতি বলতেন, ‘‘আপনি কেন এত কষ্ট করে এলেন? আমরাই তো যেতে পারতাম!’’ মান্নাদা তখন ৮৫+— তবু মজা করে বলতেন, ‘‘ঠিক আছে, ঠিক আছে, বুড়ো হই, তার পর দেখা যাবে!’’
একবার মান্নাদা এসেছেন, দাঁতে সামান্য শিরশির করছে। ডা. শেঠি দেখলেন। একটা মাত্র ওষুধ দিলেন। সমস্যার সমাধান খুব সহজেই হয়ে গেল। এই প্রসঙ্গটা ডা. শেঠি অনেককেই গল্প করতেন। যখনই একটু কোনও অসুবিধা হত, মান্নাদা চলে আসতেন ডাক্তারের কাছে। সুস্থ হতে সময় লাগত না। আর আমরা তো যে কোনও রোগ পাকিয়ে তার পর ডাক্তারের কাছে যাই। মান্নাদা ছিলেন এমনই। কোনও কাজই ফেলে রাখতেন না।
একটি বিষয় থেকে মান্নাদাকে কেউ নিরস্ত্র করতে পারেনি। ‘সময়ের কাজ সময়ে করো’ যেমন মান্নাদা’র মূল মন্ত্র ছিল, তেমনই আর একটি মন্ত্র ছিল ‘নিজের কাজ নিজে করো’। এই অভ্যাস সেই বম্বে থেকেই। ইলেকট্রিক বিল, টেলিফোন বিল, ধোপার বাড়ি—সব কিছুই মান্নাদা করতেন নিজের হাতে। বাড়ির লোকদের কথা কিছুতেই শুনতেন না। বলতেন, ‘‘নিজের কাজ নিজে করছি, এতে সমস্যা কোথায়?’’ হ্যাঁ, সমস্যা তো হতই, মান্নাদা যখন কোনও অফিসে যেতেন। ভেবে দেখুন, টেলিফোন অফিসে কাউন্টারে বসা ভদ্রলোক দেখছেন, মান্নাদা নিজে এসেছেন বিল জমা দিতে! কেমন বিব্রত অবস্থা! সবাই কত বার মান্নাদাকে অনুরোধ করেছেন, একটু খবর দিলেই আমরা আপনার বাড়ি চলে যাব—আপনি কেন কষ্ট করে আসেন! আমাদের যে খুব অস্বস্তি হয়! মান্নাদা অবাক হয়ে ভাবতেন, ওরা এ রকম বলে কেন? আমি তো অতি সাধারণ একজন মানুষ! কিছু গান গাইতে পারি এই যা।
নিজের গাড়ির উপর মান্নাদার ভীষণ মায়া ছিল। ২০১০ সাল পর্যন্ত (তখন ৯১ বছর বয়স) বেঙ্গালুরুর রাস্তায় নিজেই গাড়ি চালাতেন। তার পর ওঁর স্ত্রী ভয়ংকর অসুস্থ হওয়ার পর অবশ্য নিজে আর চালাতেন না। ২০১৩ সালের জুন মাস নাগাদ মান্নাদা ভর্তি হন দেবী শেঠির ‘নারায়ণা হৃদয়ালয়’ হাসপাতালে। আর ফেরেননি। মাঝে মাঝেই বাড়ির লোকদের বলতেন, ‘‘তোমরা মাঝে মাঝে গাড়িটাকে স্টার্ট দিও। নইলে বসে যাবে।’’ বড় মায়াময় মন। বহু দিন ওই গাড়ি মান্নাদাকে সঙ্গ দিয়েছে। তখনও চিন্তা, গাড়িটাকে ঠিক রাখতে হবে।
কিছু কিছু ঘটনা একজন মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে। অন্যের জন্য মান্নাদা কতটা ভাবতেন, এ রকম একটা ঘটনা বলি। মান্নাদা মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসেন—এ কথা সবাই জানেন। কলকাতার মতো মিষ্টি বেঙ্গালুরুতে আর কোথায় পাবেন! কল্যাণনগরে কমল দাস নামে একজন বাঙালির মিষ্টির দোকান ছিল। সাদামাঠা দোকান। ট্র্যা়ডিশনাল একই রকম কিছু মিষ্টি বানিয়ে বিক্রি করতেন। মান্নাদা ছিলেন তাঁর নিয়মিত খরিদ্দার। কমলবাবুকে তিনি একদিন বললেন, ‘‘যুগ পাল্টে গেছে। দোকানের চেহারাটা এ বার বদলাতে হবে। নইলে কাস্টমারদের নজর পড়বে কী করে? মিষ্টির মধ্যেও একটু ভ্যারাইটি আনুন মশাই! এখানকার লোকেরা কী চায় সেটা দেখুন। ছেলে দুটোকে তো ভাল ভাবে মানুষ করতে হবে!’’ ভেবে দেখুন, কোথায় ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গায়ক মান্না দে—আর কোথায় সামান্য এক মিষ্টিওয়ালা! তিনি যদিও মান্নাদার কথামতোই এর পর ওই দোকান আর তার মিষ্টির সংস্কার করেছিলেন সাধ্যমতো।
মান্নাদা চিরতরে চলে যাওয়ার পর কমলবাবু এক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে এসেছিলেন মান্নাদার বাড়িতে। মান্নাদা নেই তো কী হয়েছে, তাঁর বাড়ির লোককে আজ সেই মিষ্টি নিতেই হবে এবং এর জন্য কোনও দাম নেবেন না তিনি। কেননা, আজ তাঁর বড় ছেলে নেভিতে অফিসার, আর ছোট ছেলে সফটওয়্যার কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ভাল চাকরি পেয়েছে। ক্।
————-আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে
You may like
Dhaka Attack Unreleased Song
The Basics of Writing a Custom Research Paper
Study Managing
Amet amet dolore aliquam quiquia etincidunt.
How To Pick a Good Photo Editor
Board Portal Software for holding meetings distantly
Things to Consider When Writing a Research Paper
Ready to Go for Virtual Boardroom? Know this First!
Mail Order Brides to be
Custom Research Paper Mistakes
Latina Brides ᐈ Mail

কাজী শুভর গানে কলকাতার পল্লবী কর ও প্রেম কাজী (ভিডিও)

ভালোবাসা দিবসে দুই বাংলার মিশ্রণে ‘প্রাণের গীটার’

মাহফুজ ইমরানের এক বছরের সাধনার ফসল ‘প্রাণের গীটার’ (ভিডিও)

শাহজাহান শুভ’র ‘কথামালা’ গান অন্তর্জালে

শাকিব খানের কাছে ক্ষমা চাইলেন জায়েদ খান

রোহিঙ্গাদের নিয়ে গান গাইলো অবস্কিওর

প্রকাশ হলো ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির অরিজিত সিংয়ের সেই গান

শাকিরার নতুন মিউজিক ভিডিও ‘পেরো ফিয়েল’

তানজীব সারোয়ারের নতুন গান
