তুমি জানো নারে প্রিয় তুমি মোর জীবনের

তুমি জানো নারে প্রিয় তুমি মোর জীবনের
সৃজন মিউজিক প্রতিবেদক :
তুমি জানো নারে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা। গানটির কথা লিখেছেন কবিয়াল বিজয় সরকার। সুরও করেছেন তিনি। হৃদয়স্পর্শী জনপ্রিয় এই গানটির মূল শিল্পী বিজয় সরকার নিজেই। এরপর গানটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিল্পী গেয়েছেন। আমাদের শহুরে ও গ্রাম্য জীবন সবক্ষেত্রেই সঙ্গীত পিপাসুদের পছন্দের গান এটি। অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা কবিয়াল বিজয় সরকার।
বিজয় সরকারের জন্ম  ১৯০৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে। বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মা হিমালয়া দেবী।
স্থানীয় স্কুলে দশমশ্রেনি পর্যন্ত পড়েছেন বিজয় সরকার। পরে স্থানীয় জমিদারীর কাচারিতে নায়েবের চাকরি নেন। অবসর সময়ে গান করতেন বিজয় সরকার। ১৯৮৫ সালে বিজয় সরকার মৃত্যুবরণ করেন। জীবদ্দশায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসীমউদ্দীন ও আব্বাসউদ্দীন আহমেদ-এর ঘনিষ্ট ছিলেন বিজয় সরকার। পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।এই গুণী শিল্পী ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর ও সংগীতে অবদানের জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন তিনি।
প্রচারবিমুখ ও নিভৃতচারী এই সংগীত সাধক মানুষের হৃদয়ের আঁকুতিকে ফুটিয়ে তুলেছেন চমৎকার সুরের ব্যঞ্জনা দিয়ে। কিশোর বয়স থেকেই গান রচনা করে বিজয় সরকার নিজেই তা পরিবেশন করতেন। তার গান শুনে আর্শীবাদ করেছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা, শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা। বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের সঙ্গেও বিজয় সরকারের ছিল গভীর সম্পর্ক।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে চারণ কবি বিজয় সরকার প্রায় দুই হাজার বিজয়গীতি রচনা করেন। যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদি গান, শোকগীতি, ইসলামী গান, আধ্যাত্মিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমী গান।
তিনি বাংলাদেশ ও ভারতে আনুমানিক ৪০০০ আসরে কবিগান পরিবেশন করেন। এছাড়া তিনি রামায়ণ গানও পরিবেশন করতেন।

তুমি জানো নারে প্রিয় তুমি
মোর জীবনের সাধনা
কথা : বিজয় সরকার
সুর : বিজয় সরকার

তুমি জানো নারে প্রিয়
তুমি মোর জীবনের সাধনা
তোমায় প্রথম যেদিন দেখেছি
মনে আপন মেনেছি
তুমি বন্ধু আমার বেদন বুঝো না

ফাল্গুন দোল পূর্ণিমায়
মৃদু মৃদু বায়ু বয়
ফুলবনে পুলকের আল্পনা
মাধুয়া মাধুবী রাতে বঁধুয়া তোমারি সাথে
করেছিনু যামিনী যাপনা

(তুমি) আমায় ফেলে চলে গেলে
কি আগুন মোর বুকে জ্বেলে
একদিনও দেখতে তুমি এলে না
যদি পেতাম দুঃখিনীর কুটিরে
দেখাইতাম অন্তর চিঁড়ে
বুকের ব্যথা মুখে বলা চলে না

কাষ্ঠ-নলে দাবানল
পুড়ে যায় বন জঙ্গল
মন পোড়া পিরিত বন্ধু তাহা নয়
কত বিরহীনির তুমি অন্তর তলে
বিনা কাষ্ঠে আগুন জ্বলে
জলে গেলে জ্বলে দ্বিগুণ
নিভে না– না নিভে না

খুঁজিলাম জনম জনম
ক্ষিতি অপ তেজ মরুৎ ব্যোম
কোনখানে পাইনে তোমার ঠিকানা
পাগল বিজয় বলে চিত্ত চোর
ফিরবে কি জীবনে মোর
মনে রইলে ব্যথা ভরা বাসনা